বাঁধন,তোকে মনে পড়ে খুব !!!

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

অক্টোবর 8, 2011 লিখেছেন দার্শনিক

আমার শৈশবটা কেটেছে গ্রামে।গ্রামের স্কুলেই শিক্ষাজীবন শুরু,ক্লাস 1 পড়েই জেলা শহরে চলে আসতে হল।
নবীগঞ্জ থেকে যখন হবিগঞ্জ আসলাম প্রথমেই যে ব্যাপারটা নিয়া মা-বাবার চিন্তা,সেটা হল আমাকে কোন স্কুলে ভর্তি করা হবে।আমরা যে বাসায় থাকতাম,তার দোতলায় থাকতেন এক প্রাইমারী স্কুলের টিচার।মার সাথে উনার কথা হল,সিদ্ধান্ত হল আমাকে উনার স্কুলেই ভর্তি করানো হবে।স্কুলও বাসার কাছেই,হেটে মাত্র ২/৩ মিনিট লাগে যাইতে।

শুরু হল হবিগঞ্জে আমার শিক্ষা জীবন।
স্কুলের নাম স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রথম মাস খানেক আমাকে স্কুলে নিয়া যাইতেন ঠাকুমা,এরপর থেকে একাই যাওয়া-আসা করতাম।
আমি যে টাইপের ছিলাম,বন্ধু জোটাতে সময় লাগলো না,আমি,এজাজ,অর্ঘ্য এই তিন জন কয়েক দিনের মাঝেই বেশ ভাল বন্ধু হয়ে গেলাম।স্কুলে আমরা তিনটা সারা দিন একসাথে থাকতাম।
এর কয়েক দিন পরেই খেয়াল করলাম,আমাদের সাথে আস্তে আস্তে আরেকজনও থাকা শুরু করে দিছে।
বাঁধন !!!!!!!!!!!!!!!!!
বাঁধনের ব্যাপারে আমি তেমন কিছুই জানতাম না।বাঁধন আর অর্ঘ্য একসাথে স্কুলে আসতো,সেই সুত্র ধরে আমার সাথে বাঁধনের বন্ধুত্ব।
বাধনের চেহারাটা আজো আমার চোখে ভাশে,গোলগাল মুখ,বয়কাট চুল,কপালের উপরটা চুল দিয়া ঢাকা থাকতো,কান গুলাও চুল দিয়া ঢাকা,চোখগুলা গোলগোল,আর বেশ বড়বড়।
মুখটা সবসময় হাসি-হাসি, হাসলে গালে টোল পড়তো।
যে জিনিশটা সবচেয়ে বেশি মনে পরে,ওর ঠোটের বাম পাশে নিচের দিকে একটা “তিল” ছিল।
আমি তখন মাত্র ক্লাস 2 তে পড়ি,আর এখন Hns 2nd year এ।
আজো একটা মানুষের কথা এতো ডিটেইল মনে আছে,আমার স্মরণ শক্তি দেখে আমি অবাক।
She is A Special GIRL for me…
মনে পড়ে সারা দিন আমরা স্কুলে কি করতাম।
লোকচুরি খেলায় যদি আমি কখনও ধরা খাইতাম বাঁধনের হাতে সে কখনই আমার নাম বলতো না,দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাইত।আমি কিন্তু ওরে দেখলে ঠিকই বলে দিতাম।
ও প্রায় প্রতিদিনই স্কুলে আইসা অর্ঘ্যর সাথে ঝগড়া করতো।কারন বেঞ্চে আমি আর অর্ঘ্য পাশাপাশি বসছি,আর ও আমার পাশে বসবে।তাই অর্ঘ্যকে মাঝখান থেকে বের হয়ে ওরে বেঞ্চের মাঝের সিটে বসতে দিতে হবে।কারন,ও আমার পাশে বসবে।আবার উল্টাটাও হইতো,আমি অর্ঘ্যের পাশে বসার জন্যে ওর সাথে ঝগড়া লাগাইয়া বইসা আছি।আবার কোন দিন ও অর্ঘ্যের পাশে বসার জন্যে আমার সাথে ঝগড়া লাগাইয়া দিছে,আবার কোন দিন অর্ঘ্য আমার পাশে বসার জন্যে ওর সাথে ঝগড়া লাগাইয়া দিছে।
ও মেয়েদের সাথে তেমন মিশত না,আমার আর অর্ঘ্যের সাথেই থাকতো।
ক্লাস 1/2 তে থাকতে আমার চুল বেশ লম্বা ছিল, বাঁধনের সাথে কোন কিছু নিয়া ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি হলেই,সে আমার চুলে ধইরা টান দিত।টান বললে ভুল হবে,মোটামটি বলা যায় ঝুইল্লা যাইতো।
এই ছিল অবস্থা,আমি যদিও প্রচুর দুষ্ট ছিলাম কিন্তু ছেলে হিসেবে যথেষ্ট নিরীহ প্রকৃতির ছিলাম।
তাই বাঁধনের এই অত্যাচার গুলা নিরবে সহ্য করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।
একবার মনে আছে,ওর সাথে ঝগড়া করে ৩/৪ দিন কথা বলি নাই।
ও আইসা কান্না-কান্না কন্ঠে আমারে বলছিল,”তুই আমার সাথে কথা না বইলা,তিন দিন থাকলি কেমনে?”
আমি বলছিলাম,”তুই আমারে মারছিলি কেনে?”
সাথে সাথে ও আবার আমার চুলে টান মাইরা বলছিল,”একশবার মারমু,কিন্তু তুই কথা বন্ধ করবি কেনে?”
এই ছিল বাঁধন,আমার প্রথম ভালোবাসা!!!!!!!!!!
এইরকম মানুষের সাথে কি রাগ করে থাকা যায়?

আমি স্টাফ কোয়ার্টার স্কুলে মাত্র এক বছর পড়ছিলাম।
ক্লাস 2,ক্লাস 3তে ভর্তি হই হবিগঞ্জ গভট. হাই স্কুলে।
এক বছরের স্মৃতি আর কিইবা মনে থাকে?আরেকদিন মনে আছে,ও নখ দিয়া খামচি মাইরা আমার হাতের চামড়া ছুলাই ফেলছিল,তাও এমনভাবে যে এক্কেবারে মাংস দেখা যাইতেছিল।
আমি দিদিমনির কাছে বিচার দিতে যাব,ও এমন করুন একটা মুখ কইরা তাকাইছিল,যে বিচার দিতে যাইতে পারি নাই।বাসায় চলে আসি,অবশ্য বাসায় এটা নিয়া অনেক কৈফিয়ত দিতে হয়।
আজো মাঝে মাঝে যখন ঐ করুন মুখটা মনে পড়ে,বুকটা কেন জানি মোচর দিয়া উঠে।
বাঁধনের সাথে আর কোন স্মৃতি আমার মনে নাই।বাঁধনের কাহিনী ঐ স্টাফ কোয়ার্টার প্রাইমারী স্কুলেই শেষ হয়ে যেতে পারতো,কিন্তু কেন জানি হয় নাই।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 527 other subscribers